নড়াইলের বিশেষ স্থান ও স্থাপনা : Famous Place of Narail
(Famous Place of Narail)
নড়াইল
মির্জাপুরঃ
মির্জাপুর নড়াইল থানা সদরের একটি বৃহৎ ও বর্ধিষ্ণু শহর। এখানে একটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, ডাকঘর, হাট, দাতব্য চিকিৎসালয় আছে। অভিবক্ত প্রাক্তন চেয়ারম্যান কংগ্রেস নেতা মরহুম সৈয়দ নওশের আলী, যশোর জেলা বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও এম, এল, এ, মরহুম ওয়ালিয়ার রহমান এবং প্রাক্তন সংসদ সদস্য খন্দকার আবদুল হাফিজের জন্মস্থান হচ্ছে মির্জাপুর।
শেখহাটিঃ
শেখহাটি একটি প্রাচীন শহরের পীঠস্থান। ভৈরব নদের তীরে অবস্থিত শেখহাটি একটি বাণিজ্য কেন্দ্র। এখানে একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি ডাকঘর পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, তফসিল অফিস ও ইউনিয়ন পরিষদ অফিস আছে।
রূপগঞ্জঃ
জেলা সদর নড়াইলের প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র রূপগঞ্জ চিত্রা নদীর তীরে অবস্থিত। এই প্রাচীন হাটবাজার নড়াইলের জমিদার রূপনারায়ণ বাবুর নামানুসারে রূপগঞ্জ বলে পরিচিত। এখানে জেলার প্রধান সরকারী গুদাম ও ভিক্টোরিয়া কলেজ অবস্থিত। এখানে একটি বৃহত্তর সাপ্তাহিক হাট বসে।
মাছিমদিয়াঃ
মাছিমদিয়া নড়াইল পৌর এলাকার মধ্যে এবং নড়াইলের উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি সমৃদ্ধ গ্রাম। এটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্র শিল্পী এস, এম, সুলতানের জন্মস্থান। সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের আমলে এই গ্রামে চিত্রা নদীর তীরে সরকারী ব্যয়ে তার জন্য একটি বাসভবন এবং ছবি আকারে জন্য ষ্টুডিও নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে চারু ও কারুকলা ইনষ্টিটিউট। তাঁর বাড়িটিকে শিশু স্বর্গ বলা হয়। এখানে ছোট ছোট ও শিশুরা এসে আঁকা শিখত। শিল্পীর এই বাসভবনটির অঙ্গনে বিভিন্ন জাতের ফুল গাচের সমারোহ দেখে মনে হতো আশ্রম। আশ্রম সদৃশ্য এই বাসভবনে ছিল পোষা পশু পাখির এক ক্ষুদ্র চিড়িয়াখানা। তাছাড়া তিনি নিজ হাতে একটি নৌকা তৈরী করেছিলেন শিশুরা এটাতে চড়ে চিত্রা নদীতে ঘুরে বেড়াবে বলে। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সাজানো বাগান, ক্ষুদ্র চিড়িয়াখানা আর নেই। তবে নৌকাটি এখনো চিত্রা নদীতে আছে। তাঁর চারুকলা ইনষ্টিটিউটি যেভাবে ছিল সেভাবেই তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। কিছুদিন তার বাড়িটি অযত্ন অবহেলায় থাকার পর বর্তমানে একে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
গোয়াল বাথান:
একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী গ্রাম। এই গ্রামে সুলতানী আমলে নির্মিত একটি সুদৃশ্য মসজিদ আছে। প্রায় ৩০০ বছর পূর্বে মুন্সি হযতর তুল্লাহ নামক এক ব্যক্তি মসজিদটি নির্মাণ করেন। ১৯৬৪ সনের প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড়ে মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তৎকালীন গর্ভনর মোনায়েম খান এই মসজিদটির প্রাচীনত্বের কথা শুনে সংস্কারের জন্য অর্থ মঞ্জুর করেন। এই মসজিদটি গ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তি। যশোরের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ খান টিপু সুলতানের দাদা বাড়ী এখানে।
রারগ্রাম জোড়বালা মন্দিরঃ
যশোর জেলার মহম্মদপুর থেকে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দক্ষিণে নবগঙ্গগার তীরে অবস্থিত রায়গ্রাম নামক স্থানে একটি জোড়াবাংলা মন্দির আছে। এটি রাজা সীতারামের জোড়াবাংলা মন্দিরের অনুকরণে নির্মিত। মন্দিরের সামনের দিকে আছে অর্ধবৃত্তাকার খিলানের সাহায্যে নির্মিত তিনটি প্রবেশপথ। প্রবেশ পথের পরেই বারান্দা এবং বারান্দার পরেই মন্দিরের গর্ভগৃহ। মন্দির গোত্রের শিলা লিপি থেকে জানা যায় এটি ১৭২৪ খ্রিস্টাব্দে রামশংকর কর্তৃক নির্মিত হয়েছিল। তিনি এখানে একটি শিব রমন্দিরও নির্মাণ করেছিলেন। উভয় মন্দিরই এখন সংস্কারের অভাবে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য খ্যাত এই লোহাগড়া দেশীয় পদ্ধতিতে গুড় থেকে চিনি তৈরীর ৬/৭টি কারখানা ছিল। কিন্তু উণবিংশ শতাব্দীর দিকে এই চিনি কারখানাগুলির বিলুপ্তি ঘটে। এখানে একসময় সোডালেমনেড নামে সফটড্রিংক তৈরীর বেশ কয়েকটি কারখানাও ছিল। এছাড়া ছিল ৪/৫টি কাঠের গোলা। নৌকা ও আসবাবপত্রাদি তৈরীতে এই সমস্ত কাঠ ব্যবহৃত হতো। লোহাগড়ায় এক সময় প্রচুর মাছ ও দুধ পাওয়া যেত। দুধ সস্তার ফলে বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি, খাঁটি ঘি এবং মাখনের জন্য লোহাগড়ার খ্যাতি ছিল। কিন্তু এখন লোহাগড়ার ব্যবসা বাণিজ্যের অতীত ঐতিহ্য তেমন আর নেই। কিন্তু এখন লোহাগড়ার ব্যবসা বাণিজ্যের অতীত ঐতিহ্য তেমন আর নেই। তবে বর্তমানে এলাকাটি ধান, পাট ও ডালের অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষাদীক্ষার ক্ষেত্রে লোহাগড়া আদর্শ মহাবিদ্যালয় এবং রামনারায়ন পাবলিক লাইব্রেরীর অবদান উল্লেখযোগ্য। লোহাগড়া পাবলিক লাইব্রেরীটিতে বহু প্রাচীন আমলের তালপাতায় সুন্দর হস্তাক্ষরের পুথির বিরল সংগ্রহ লাইব্রেরীটিকে গৌরব দান করেছে।
অর্ধশতাব্দী পূর্বেও লোহাগড়ার সাথে খুলনা এবং অন্যান্য অঞ্চলে নৌপথে ব্যবসা বাণিজ্য চলত। তখন নৌপথ ছাড়া লোহাগড়ার অন্য কোন বাণিজ্য পথ ছিল না। কিন্তু নবগঙ্গা নদী নাব্যতা হারানোর ফলে কৃষিপণ্যের সমৃদ্ধশালী বাণিজ্য কেন্দ্র লোহাগড়ার সাথে এখন স্থলপথে পণ্য আনা-নেয়া করা হয়।
লোহাগড়া জোড়বাংলা মন্দির
লোহাগড়া আদর্শ কলেজের উত্তর পার্শ্বে একটি প্রাচীন জোড়বাংলা রাধা গোবিন্দের মন্দির আছে। মন্দিরটির খিলান এবং ছাদ ভেঙ্গে গিয়েছে। মন্দিরের দেয়াল পাতলা টালী সুদৃস্য ইটের তৈরী, দেয়ালে নানাবিধ বিচিত্র নকশা আঁকা। যা টেরাকোটা চিত্র বলে পরিচিত। মন্দিরটি খুবই প্রাচীন। সম্ভবতঃ আড়াইশ বৎসর পূর্বে নির্মিত। তবে আশ্চর্যের বিষয় এই মন্দিরের টেরাকোটার টালীগুলি কালের প্রবাহে এখনো বিশেষ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়নি। এগুলি যে কোন প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের অমূল্য নির্দশন।
লহ্মীপাশা কালীমন্দির
লোহাগড়া থানার লহ্মীপাশা কালিবাড়ী বাংলাদেশের প্রাচীন কালীবাড়িগুলির মধ্যে অন্যতম। কালীবাড়ি থেকে প্রাপ্ত ইতিহাস পুস্তক থেকে জানা যায় এই কালীবাড়ির প্রতিষ্ঠতা ছিলেন কামদেব নামক জনৈক সিদ্ধি পুরুষ। তিনি লোহাগড়া শ্মশানে দীর্ঘদিন তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেন এবং বর্তমান কালীমন্দিরের দক্ষিণে একটি হরীতকী গাছের নিকট কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করেন। কালক্রমে এই কালীমূর্তি বিভিন্ন রাজা জমিদারদের আনুকূল্যে বর্তমান মন্দিরে প্রতিষ্ঠালাভ করে। কালীমন্দিরের পার্শ্বে শিবমন্দির, নাটমন্দির ইত্যাদিও নির্মিত হয়। ১৯৭১ সনে হানাদার বাহিনী কালীমূর্তিটিকে গুলি করে ধ্বংস করে। দেশ স্বাধীন হবার পর হিন্দু সমপ্রদায় পুনরায় কালীমূর্তি নির্মাণ করে পূজা অর্চনা চালিয়ে আসছে।
মকিপুর
লোহাগড়া থানার ইতিনা ইউনিয়নের মকিমপুর গ্রামে একটি প্রাচীন মঠ ছিল। দক্ষিণমূখী বর্গাকার এই মাঠের আয়তন ছিল ২১২১ ফুট এবং মঠের দেয়াল ছিল ৪ ফুট প্রশস্ত। এটি নীচ থেকে কিছুদুর পর্যন্ত বর্গাকারে এবং পরবর্তী উপরের অংশটুক ক্রমশ সরু হয়ে গিয়েছে। এর উচ্চতা ছিল ৩০ ফুট। এটি ১৬১৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত হয়েছিল বলে মঠের গাত্রলিপি থেকে জানা যায়। বহু পূর্বে মঠটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
১৯৮১ সনে প্রথম পর্যায়ে মান উন্নীত থানা হিসেবে কালিয়া তালিকাভুক্ত হয়। উপজেলা ঘোষণার পরে কালিয়াতে দেওয়ানী ও ফৌজদারী আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া একটি পাবলিক লাইব্রেরী ও পৌরসভা স্থাপিত হয়। নড়াইল সদর এবং কালিয়াতেই শুধুমাত্র পৌরসভা আছে। পৌর এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারিত হওয়ায় কালিয়া দ্রুত উন্নত হচ্ছে। কালিয়ার সাথে নৌপথে বন্দর নগরী খুলনার সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় দ্রুত কালিয়া একটি উন্নয়নশীল শহরে পরিণত হচ্ছে।
বড়দিয়া টোনা বন্দর
কালিয়া থানার টোনা একটি প্রাচীন গ্রাম। এক সময় টোনা গ্রামের মধ্যে দিয়ে মধুমতি নদী থেকে একটি প্রশস্ত খাল প্রবাহিত ছিল যার নাম ছিল টোন। খাল। টোনা ছিল একটি সমৃদ্ধ নদী বন্দর। এখানে সাপ্তাহিক হাট বসত; কিন্তু বর্তমানে টোনা মৃত বন্দর। ১৯১৮ সনে মধুমতি নদী থেকে বড়দিয়ার নিকট নবগঙ্গা নদীর সাথে একটি খাল কেটে সংযোগ করে দেয়া হয়। এই খালকে হ্যালিফাক্স ক্যানেল বলে। এই খালের ফলে নবগঙগার প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং বড়দিয়ার টোনার বিকল্প স্টিমার স্টেশন ও বন্দর গড়ে উঠে। এখানে পাট ব্যবসার জন্য বড় বড় গুদাম নির্মিত হয়। এখানে একটি খাদ্য গুদাম, আটা, চাল ও তেলকল আছে। বড়দিয়া বর্তমানে বৃহত্তর যশোর জেলার বৃহত্তর নদী বন্দর।
সিলিমপুর
সিলিমপুর সাবেক বেন্দা এবং আধুনিক হামিদপুর ইউনিয়নের বিখ্যাত গ্রাম। ওই গ্রামের মোল্যা পরিবার প্রসিদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। বেন্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ মোল্লাকে নকশালগণ বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন। তারই নামানুসারে বেন্দা ইউনিয়নের নামকরণ হয়েছে হামিদপুর ইউনিয়ন। ব্রিটিশ আমলে সিলিমপুর গ্রামের কয়েকজন আট কোণ বিশিষ্ট জাল সিকি মুদ্রা তৈরী করত। এগুলি এতই নিখুত ছিল যে তা সরকারী টাকশালে নির্মিত মুদ্রার মতই ছিল। এগুলি সিলিমপুর সিকি বলে পরিচিত ছিল এবং সরকারী মুদ্রার সমান্তরাল এই মুদ্রাও চালু ছিল।
তথ্যসূত্র: যশোর গেজেটিয়ার।সূত্র: Jessore Info